Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
গুজব থেকেই কি লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ
দেশ-বিদেশের খবর

গুজব থেকেই কি লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ

৮ জুন, ২০২৫
4 মিনিট

বিবিসি।। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে হুয়ান ও তাঁর বন্ধু লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে একটি হার্ডওয়্যার দোকানের গাড়ি রাখার জায়গায় একত্র হয়েছিলেন।

বিবিসি।। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে হুয়ান ও তাঁর বন্ধু লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে একটি হার্ডওয়্যার দোকানের গাড়ি রাখার জায়গায় একত্র হয়েছিলেন। সাধারণত, সেখানে জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে অনেক দিনমজুরও থাকেন। এঁদের অনেকেই অনিবন্ধিত অভিবাসী-ক্রেতা বা ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার আশায় সেখানে অপেক্ষা করেন। এক দিন আগে সেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন দমন অভিযান ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু রোববার (০৮ জুন) লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যারামাউন্ট শহরতলির ওই হোম ডিপো শাখার বাইরে কেবল দুটি ছোট পিকআপ ট্রাক দেখা গেছে। সেগুলোতে ছাদ মেরামত, সংস্কার বা রং করার কাজে সহায়তার কথা বলে বিজ্ঞাপন টানানো ছিল। উল্লেখ্য, প্যারামাউন্ট শহরের বাসিন্দাদের ৮২ শতাংশের বেশি হিস্পানিক। হোম ডিপোর এই শাখা ঘিরে একটি গুজব থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন দমনবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিক্ষোভের আগে গুজব ছড়িয়েছিল, এখানকার দিনমজুরদের ধরে নেওয়া হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিবাসী দিনমজুরদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হিস্পানিক অধ্যুষিত প্যারামাউন্ট শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ একসময় সহিংস রূপ নেয়, ছোড়া হয় ইটপাটকেল ও মলোটভ ককটেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ পিপার স্প্রে, রাবার বুলেট ও ধোঁয়ার বোমা ব্যবহার করে। এলাকাবাসীর অনেকে বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা সেখানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের গাড়ি দেখতে পেয়েছেন। অভিবাসন কর্তৃপক্ষের গাড়ি দেখতে পাওয়ার খবরে ওই এলাকায় সঙ্গে সঙ্গে ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর খবর আসে, হোম ডিপোতে অভিযান চালিয়ে দিনমজুরদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু অনিবন্ধিত অভিবাসী কাজের খোঁজে হোম ডিপো চত্বরে জড়ো হন। মূলত ভুয়া তথ্য বা গুজব থেকেই প্যারামাউন্ট শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের (ডিএইচএস) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ওই এলাকার অন্যান্য স্থান থেকে বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে আটক করা হলেও ওই দোকানে অভিযান চালানোর খবর ছিল ভুয়া। ডিএইচএস থেকে আরও বলা হয়, ভুয়া খবর ছড়ালেও, লস অ্যাঞ্জেলেসের কোনো হোম ডিপোতে আইস অভিযান চালায়নি। প্যারামাউন্টে বিক্ষোভের মধ্যে একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং কয়েকটি দোকানপাটে লুটপাট চালানো হয়। অভিবাসীবিরোধী অভিযানের জেরে লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তাকে ‘দাঙ্গা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। গত শনিবার, বিক্ষোভ দ্বিতীয় দিনে গড়ালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ক্ষমতাবলে লস অ্যাঞ্জেলেসে ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন। সাধারণত সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের গভর্নর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। রোববার টানা তৃতীয় দিন বিক্ষোভ আরও জোরদার হলে হার্ডওয়্যার দোকানের বিপরীত পাশে একটি বিজনেস পার্ক ঘিরে নিরাপত্তা বাড়াতে সশস্ত্র ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ন্যাশনাল গার্ড সদস্যরা ওই এলাকা ঘিরে রেখেছেন এবং যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। ন্যাশনাল গার্ড ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি অবস্থানে আছেন। বিক্ষোভকারীরা গালাগালি করছেন এবং মেক্সিকোর পতাকা ও ব্যানার ওড়াচ্ছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তিকে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের লক্ষ্য করে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, তোমাদের এখানে কেউ পছন্দ করছে না! সে সময়ে অন্য এক বিক্ষোভকারী স্প্রে পেইন্টের ঢাকনা খুলে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্লীল শব্দ লিখতে শুরু করেন। ডিএইচএস বিবিসিকে বলেছে, যে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সেখানে তাদের একটি কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয়টি অভিযান পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল, দাঙ্গাবাজরা যা জেনে ফেলেছে। এ সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১১৮ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ডিএইচএস। তারা বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন অপরাধী চক্রের সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া এসব অভিবাসীর মধ্যে অনেকে অতীতে মাদক পাচার, হামলা এবং ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িত ছিলেন বলেও সংস্থাটি থেকে বলা হয়েছে। গতকাল রোববার (০৮ জুন) নিউ জার্সির মরিসটাউন থেকে এয়ারফোর্স ওয়ানে ওঠার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে সহিংস লোকজন আছেন এবং তাঁরা এ কাজের দায় এড়াতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব শহরের বেশির ভাগ বাসিন্দা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, সেগুলোর একটি লস অ্যাঞ্জেলেস। ডিএইচএস বিবিসিকে বলেছে, যে এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সেখানে তাঁদের একটি কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয় অভিযান পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল-দাঙ্গাবাজরা যা জেনে ফেলেছে। সেখানে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় হিস্পানিকরা শুধু সংখ্যার দিক দিয়েই বেশি নয়, বরং বিশেষ করে মেক্সিকোর দক্ষিণ থেকে আগত অভিবাসীরা এখানকার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছেন। বাসিন্দারা শহরটিকে ‘শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচয় দেন। যার অর্থ, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের অভিবাসন আইন প্রয়োগকারীদের সহযোগিতা করবেন না। এখানকার কিছু লোক বলেছেন, তাঁরা আগেই একটা চাপা উত্তেজনা অনুভব করছিলেন-রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেসে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে তাঁদের সেই উত্তেজনা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। প্যারামাউন্টে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মারিয়া গুতিয়েরেজ বলেন, প্রতিরোধের এখনই সময়। এরা আমার লোক। মারিয়ার জন্ম মেক্সিকোতে, তবে শৈশব থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। এ নারীর মতো লস অ্যাঞ্জেলেসে অনেকেই আছেন, যাঁদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করেন। মারিয়া বলেন, এটা লস অ্যাঞ্জেলেস। এটা আমাদের সবার। প্রত্যেকেরই পরিবারের কেউ বা চেনাজানা এমন কেউ আছেন, যাঁদের বৈধ কাগজপত্র নেই।

Share this article

দেশ-বিদেশের খবর

দেশ-বিদেশের খবর বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement