ব্রেকিং নিউজ
ভারত-পাকিস্তানকে ‘ধৈর্য’ ধরতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
অলৌকিক
প্রবন্ধ

অলৌকিক

৩০ অক্টোবর, ২০২৪
4 মিনিট

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর। জানি না সবাই ভূতে বিশ্বাস করেন কি না? কেউ বলেন ভূত আবার কী, সবই গাঁজাখুরি। কেউ আবার ভূত নিয়ে দারুণ সিরিয়াস।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর। জানি না সবাই ভূতে বিশ্বাস করেন কি না? কেউ বলেন ভূত আবার কী, সবই গাঁজাখুরি। কেউ আবার ভূত নিয়ে দারুণ সিরিয়াস। মানা না মানা, যার যার ব্যাপার। তা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে যেতে চাই না। আমি শুধু নিজের জীবনের কয়েকটা অভিজ্ঞতা পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই। যাকে আমার অন্তত ভৌতিক বলে মনে হয়েছে! ইংল্যান্ড সফরের একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। আমি তখন ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। চেস্টারলে স্ট্রিটের লুমলি ক্যাসেলে উঠেছিলাম আমরা। ডারহামে খেলা থাকলে সব টিমকে ওই হোটেলেই রাখা হয়। ইংল্যান্ডে সাধারণত পুরনো ক্যাসেলগুলোকে সংস্কার করে হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়ে থাকে। এমনিতে লুমলি ক্যাসেল বেশ ঝাঁ-চকচকে হোটেল। কিন্তু সেখানে অমন ভৌতিক অভিজ্ঞতা হবে, ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। হোটেলের একটা বড় ঘরে আমার থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। টিমের অনেকেই রাতে আলো জ্বেলে ঘুমোত। কিন্তু আমি আবার আলো জ্বেলে বিশেষ ঘুমোতে পারি না। কিন্তু পরের দিন ম্যাচ ছিল আমাদের। তাই রাতে না ঘুমিয়ে উপায়ও ছিল না। তা, একটু তাড়াতাড়ি ঘরের সমস্ত আলো বন্ধ করে ঘুমোতে গেলাম। রাত তখন ক’টা হবে, কে জানে। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল! শুনতে পেলাম, বাথরুমের কল থেকে জল পড়ছে! বাথরুমে গিয়ে দেখলাম, যা ভেবেছি তাই। কল খোলা আর জল পড়ছে। ভাবলাম, নিশ্চয়ই কল বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছি। যা-ই হোক, বাথরুমের সমস্ত কল বন্ধ করে ফের এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর আবার ঘুম ভাঙল, আবার শুনলাম কল থেকে জল পড়ছে! এবার আর থাকতে পারিনি। প্রচন্ড ভয় পেয়ে হোটেলের রিসেপশনে ফোন করে জিজ্ঞেস করি যে ব্যাপারটা কী? কেন বারবার কলগুলো খুলে যাচ্ছে? আমাকে বলা হল, রাতের দিকে নাকি জলের ‘ফ্লো’ বেশি থাকে। তাই এরকম হতে পারে। সেই রাতে আর ভালো ঘুম হয়নি। পরের দিন ঘুম থেকে উঠতেও দেরি হয়ে যায়। ব্রেকফাস্ট টেবিলে হোটেলের এক কর্মীকে ঘটনাটা খুলে বললাম। জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে সমস্যাটা ঠিক কী হয়? তা ভদ্রলোক সব শুনে আমার রুম বদলে দেওয়ার কথা বললেন। কিন্তু ঘর পাল্টানোর ইচ্ছে আমার একেবারেই ছিল না। অমন বড়, খোলামেলা ঘরে থাকতে কে না চায় ? পাল্টা বললাম, ঘর তো ঠিকই আছে। তাহলে রুম বদলানোর কথা কেন বলছেন? আমার প্রশ্নের উত্তরে সেই কর্মী যা বলেছিলেন যেদিন, জীবনে ভুলব না। উনি আমায় বলেছিলেন, ‘স্যর, এই ঘরটা আমরা কাউকে দিই না। অনেক বছর আগে এই ক্যাসেলের মালিক ওই ঘরে মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ওই ঘর কোনও অতিথিকে দেওয়া হয় না। কিন্তু ভারতীয় টিম যখন চেক-ইন করল, তখন হোটেলের সব রুম বুকড ছিল। তাছাড়া আপনি ক্যাপ্টেন। আপনার ঘরে টিম মিটিং হতে পারে। সে-কথা ভেবেই হোটেলের সবচেয়ে বড় রুমটা আপনাকে দেওয়া হয়েছে।’ কী বলব, বুঝতে পারছিলাম না। শুধু ভাবছিলাম, রুম নেই বলে শেষে কি না ভূতের সঙ্গে থাকতে পাঠিয়ে দিল! দ্বিতীয় ঘটনাটা হোটেলে নয়, আমাদের বাড়িতে। তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি। রবিবার সন্ধেয় বাড়িতে বসে কাকার সঙ্গে গল্প করছিলাম। আমাদের বাড়িতে একটা ছেলে কাজ করত। কাকা আমায় বলল, ‘একটু চা করে নিয়ে আসতে বল না।’ কিন্তু বাড়ির সব জায়গায় খোঁজার পরও কোথাও পেলাম না ছেলেটাকে। মনে হল একবার ছাদে যাই। পরমুহূর্তেই আবার মনে হল, ভর-সন্ধেয় ছাদেই বা ও কী করবে? তবু গেলাম একবার ছাদে। আর গিয়ে যে দৃশ্য দেখেছিলাম, শিরদাঁড়া দিয়ে হিমস্রোত নেমে এসেছিল! দেখলাম, ছাদের পাঁচিল দিয়ে ছেলেটা দৌড়ে বেড়াচ্ছে! পাঁচিল যে খুব চওড়া, এমন নয়। ছেলেটা যে কোনও মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে। আমি দৌড়ে নিচে গেলাম। বাড়ির সবাইকে ডাকলাম। কিন্তু ছাদে ফিরে দেখি ছেলেটা কোথাও নেই! আরে, গেল কোথায়? ছাদ থেকে পড়ে গেল নাকি ? খুঁজতে-খুঁজতে দৌড়ে গেলাম নিচে। কিন্তু না, সেখানেও নেই। শেষে আবিষ্কার করা গেল ছেলেটাকে। দেখলাম, নারকেল গাছের একটা পাতার উপর টানটান হয়ে শুয়ে রয়েছে! বিশ্বাস করুন, ঘটনাটার কথা বলতে গিয়েও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার। গাছের পাতার ওপর কেউ শুয়ে থাকতে পারে? কখনও সম্ভব? আমার কথা ছেড়ে দিন। বাড়ির বড়রা পর্যন্ত কী করবে, সেদিন বুঝে পাচ্ছিল না। ছেলেটাকে শেষে নামানো হয় গাছ থেকে। ওই ঘটনার পর থেকে ছেলেটা অস্বাভাবিক আচরণ করতেও শুরু করে দেয়। আমার বাড়ির লোকজনও প্রবল ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বলুন না, অলৌকিক ছাড়া এর কোনও ব্যাখ্যা আছে?

Share this article

প্রবন্ধ

প্রবন্ধ বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement