জাতীয়
রংপুরে মহানবী (সা.)–কে কটূক্তির অভিযোগে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিশোর গ্রেপ্তার, ১৪টি বসতঘর ভাঙচুর
২৮ জুলাই, ২০২৫
3 মিনিট
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগে এক কিশোরকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় উত্তেজিত লোকজন শনিবার রাতে ও রোববার বিকেলে ওই কিশোরের বাড়িসহ সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজনের ১৪টি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী। বাড়ি গঙ্গাচড়ার বেদগাড়ি ইউনিয়নের একটি গ্রামে।
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছে—এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। পরে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে মিছিলসহ উত্তেজিত লোকজন তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয়বার আরেকটি মিছিল এসে কিশোরের এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। পরে রাতে থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওসি আল এমরান বলেন, গতকাল রাত ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত পুলিশ ছিল। পরিস্থিতি শান্ত করার পর তাঁরা চলে আসেন। আজ জোহরের নামাজের পর হাজার হাজার লোক সেদিকে যাবেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর সাহায্য চান। বেলা একটা থেকে পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়িঘরে হামলা শুরু করলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর হয়। এতে পুলিশ সদস্যদের অনেকে আহত হয়েছেন। একজন কনস্টেবলকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আলদাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। সেখান থেকে ৫০০ গজ দূরে বাড়িঘরে হামলা করছে উত্তেজিত জনতা। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ১৪টি বসতঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রমোদ মোহন্ত বলেন, গ্রামটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সীমানা এলাকা। দুপুরে গ্রামের পাশে কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার থেকে খিলালগঞ্জে মানববন্ধনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। গঙ্গাচড়া থানা-পুলিশ জানিয়েছিল, তারা শুধু মানববন্ধন করবে, তাদের বাড়ির দিকে আসবে না। কিন্তু বেলা তিনটার দিকে উত্তেজিত জনতা গঙ্গাচড়ার খিলালগঞ্জ বাজারে থেকে জড়ো হয়ে ওই কিশোরের গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ির দিকে স্লোগান দিতে দিতে আসে। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।
ঘটনার পর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকায় টহল দিচ্ছে। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে খিলালগঞ্জ বাজারে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্ত কিশোরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল উত্তেজিত লোকজন।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে খিলালগঞ্জ বাজারে উত্তেজিত জনতার সঙ্গে কথা বলতে যান গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে। আমরা তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছি।’