ব্রেকিং নিউজ
ভারত-পাকিস্তানকে ‘ধৈর্য’ ধরতে বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
ঋত্বিকের বাড়ির ধ্বংসস্তুপে জ্বলে উঠল জন্মদিনের আলো
সংস্কৃতি

ঋত্বিকের বাড়ির ধ্বংসস্তুপে জ্বলে উঠল জন্মদিনের আলো

৩ নভেম্বর, ২০২৪
4 মিনিট

ডেস্ক রিপোর্ট।। সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তুপের প্রতিটি ইট যেন হয়ে উঠল মোমদানি। ইটে-ইটে জ্বলে উঠল জন্মদিনের আলো। ইটগুলো কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির।

ডেস্ক রিপোর্ট।। সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তুপের প্রতিটি ইট যেন হয়ে উঠল মোমদানি। ইটে-ইটে জ্বলে উঠল জন্মদিনের আলো। ইটগুলো কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির। সেটি এখন ধ্বংসস্তুপ। সোমবার (০৪ নভেম্বর) ছিল ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মদিন। ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি আয়োজন করেছিল এই অনুষ্ঠানের। রাজশাহী নগরের মিয়াপাড়ায় ঋত্বিক ঘটকের এই পৈতৃক বাড়ি। এ বাড়িতেই শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি সময় কাটিয়েছেন ঋত্বিক ঘটক। রাজশাহীর সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবির মুখে সংরক্ষণের উদ্যোগের মধ্যেই গত ৬ আগস্ট বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের লোকজন বাড়িটি ভেঙে ফেলেছেন বলে মনে করেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ঋত্বিকের পরিবার কলকাতা চলে যাওয়ার পরে ১৯৮৯ সালে তৎকালীন সরকার এ বাড়ির ৩৪ শতাংশ জমি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে ইজারা দিয়েছিল। ঋত্বিকের ভিটার উত্তর অংশে গড়ে তোলা হয় হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের আধুনিক ভবন। আর এই ভবনের দক্ষিণ অংশে ছিল ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো বাড়ি। রাজশাহীর ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটি দীর্ঘদিন ধরেই ঋত্বিকের বাড়িটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকারও এতে সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু নানাভাবেই এতে বিরোধিতা করে আসছিল হোমিওপ্যাথি কলেজ। ফিল্ম সোসাইটি প্রতিবছর ঋত্বিকের জন্মদিনে এ বাড়ির আঙিনায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এতে অসহযোগিতা দেখা যেত হোমিওপ্যাথি কলেজের। দর্শনার্থীদের কেউ বাড়িটি দেখতে এলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিত না বলেও অভিযোগ আছে। এর মধ্যেই গত ৬ ও ৭ আগস্ট বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এবার ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকীতে সোমবার সন্ধ্যায় ওই ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তুপের মধ্যেই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইটের দুটি স্তুপের মাঝের অল্প একটি ফাঁকা স্থানে করা হয় অতিথিদের বসার জায়গা। দুটি ইটের স্তুপে জ্বালানো হয় অসংখ্য মোমবাতি। একটি স্তুপের ওপর রাখা হয় ঋত্বিক ঘটকের ছবি। অন্য আরেকটি ইটের স্তুপের ওপর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ঋত্বিক ঘটকের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী’। হোমিওপ্যাথিক কলেজের ‘বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের’ পক্ষ থেকেও এখানে-ওখানে সাঁটানো কিছু ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ল। একটিতে লেখা, ‘কতিপয় নামসর্বস্ব ভূমিদস্যু সংগঠনের কবল থেকে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রক্ষায় প্রতিবাদ’। একটি ফেস্টুনে লেখা, ‘আরডিএ কর্তৃক অনুমোদিত কলেজ ও হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের মূল নকশার পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই’। অন্য একটি ফেস্টুনে লিখে রাখা হয়েছে, ‘মিথ্যা প্রচারণা বন্ধ করুন। তথাকথিত ভাঙা বাড়ি কারও ব্যক্তিগত নয়, বরং হোমিও কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি’। আরেকটি ফেস্টুনে লেখা, ‘ভূমিদস্যুদের কবল থেকে হোমিও কলেজকে রক্ষা করুন’। ঋত্বিকের জন্মবার্ষিকীর আলোচনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব ব্যানার-ফেস্টুনের কথা তুলে ধরলেন সভাপ্রধান ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হোসেন। বললেন, আমাদের ভূমিদস্যু বলা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় এটা লিখে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভূমি অফিসে রেকর্ড আছে এই জমির মালিক ঋত্বিক ঘটকের মা ইন্দুবালা দেবী। এখন যদি আপনাদের (কলেজ কর্তৃপক্ষ) প্রশ্ন করি, আপনারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন ?’ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা আগেও বলেছি, কলেজের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। কলেজ যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে। শুধু ঋত্বিক ঘটকের মূল বাড়ির যে অংশটুকু, সেটা সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের এ দাবির মুখে সরকার ৫২ লাখ টাকার প্রকল্পও দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নের আগেই ‘ছাত্র-জনতা’ ও ‘দুষ্কৃতকারীদের’ ওপর দায় চাপিয়ে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হলো। পাবনায় সুচিত্রা সেনের বাড়িও দখল করে নিয়েছিল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেটা উদ্ধার হয়েছে। এটাও হবে। যারা ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভাঙার সঙ্গে জড়িত, তারা অপরাধী। তারা ঐতিহ্যকে হত্যা করেছে। এদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আকরাম খান। তিনি বলেন, দিনে দিনে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা এভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া তার বড় প্রমাণ। এখন আমরা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারি, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি নিয়ে আমাদের মন খারাপ করে বসে থাকলে চলবে না। হতাশ হওয়া যাবে না। ভাঙা বাড়ি থেকেই যেন আমরা ফিনিক্স পাখির মতো উঠতে পারি। সামনে ঋত্বিকের ১০০তম জন্মবার্ষিকী। এর আগেই আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। ঋত্বিককেন্দ্রিক চলচ্চিত্রচর্চা গতিশীল করতে হবে। আমরা যেন এখানে দায়বদ্ধ হয়ে থাকতে পারি। আলোচক হিসেবে কথা বলেন ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জি। তিনি বলেন, যে জাতি গুণীজনের কদর করে না, সেখানে গুণীজন জন্মে না। তাই আমরা চাই, যার যেটুকু সম্মান প্রাপ্য, তাঁকে সেটা দেওয়া হোক। একসময় ঋত্বিক ঘটকদের জন্য রাজশাহী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। এখন সেই কর্মকান্ড নেই। এত দিনেও ঋত্বিকের ভিটা সংরক্ষণ কেন হয়নি, সেটা ভেবে আমি অবাক হচ্ছি। ঋত্বিক ঘটকের বাড়িটি উদ্ধার করে এখানে স্মৃতি কমপ্লেক্স কিংবা জাদুঘর করা উচিত। এ উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, তারা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। অচিরেই যেন এই কাজটা বাস্তবায়িত হয়, এটাই আমার চাওয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, রাজশাহীর প্রবীণ সাংবাদিক ও আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আ. আল-মামুন। অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মাদ তাওকীর ইসলাম, ডিরেক্টরস অ্যান্ড অ্যাক্টরস গিল্ড রাজশাহীর সভাপতি ওয়ালিউর রহমানসহ সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সবনাজ মোস্তারি। খেলাঘর আসর, রাজশাহীর শিল্পীদের জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে অনুষ্ঠানের অতিথিরা মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। তিন দিনের এ আয়োজনের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮) প্রদর্শিত হবে। আর অনুষ্ঠানের শেষ দিন বুধবার (০৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আলোচনার পর প্রদর্শিত হবে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০)।

Share this article

সংস্কৃতি

সংস্কৃতি বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement