সংস্কৃতি
সংস্কৃতিকর্মীদের সমাবেশ, খোঁড়া যুক্তিতে একুশের বইমেলা বন্ধ করা যাবে না
৪ অক্টোবর, ২০২৫
3 মিনিট
প্রথম আলো।। কোনো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না। এই মেলা কেবল বই বেচাকেনার হাট নয়, এটি দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অর্জন।
প্রথম আলো।। কোনো খোঁড়া যুক্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে অমর একুশে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না। এই মেলা কেবল বই বেচাকেনার হাট নয়, এটি দেশের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক অর্জন। বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত চলছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের নিয়ে সেই চক্রান্ত প্রতিহত করবে।
আজ রোববার (০৫ অক্টোবর) সকালে বাংলা একাডেমির সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকেরা ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়ে এ কথা বলেন। রাজধানীর ৩১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট ‘গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্য’ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সমন্বয়কারী মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, আগামি ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় অমর একুশে বইমেলা নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মেলা বন্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। কখনো বলা হচ্ছে, মেলা চলতি বছরের ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে শুরু হবে। আবার পরে বলা হচ্ছে, সেই ঘোষিত সময়ে মেলা হবে না। নির্বাচনের পরে মেলা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে একটি মহল বইমেলা বন্ধ করতে সচেষ্ট। এই মহল জাতির সব গৌরবময় সাংস্কৃতিক অর্জনকে বিনষ্ট করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারই অংশ হিসেবে বইমেলা নিয়ে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম বলেন, অমর একুশে বইমেলার সঙ্গে বাঙালির আবেগ ও চেতনা জড়িত। লেখক সৃষ্টি, সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে এই মেলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু দেশে নয়, বিদেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও অনেকে বইমেলা কেন্দ্র করে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করে থাকেন। বইমেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে সংস্কৃতিকর্মীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
আগেও নির্বাচনের সময় বা রমজান মাসেও বইমেলা আয়োজনের দৃষ্টান্ত রয়েছে উল্লেখ করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সহসভাপতি কামরুজ্জামান বলেন, কাজেই এসব কারণ দেখিয়ে বইমেলা বন্ধ করা যাবে না।
কবি হাসান ফখরি বলেন, নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বইমেলা বন্ধের কথা বলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের দায়িত্ব। সেই কাজ সরকারকে করতে হবে। কোনো একটি আয়োজনের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনকে বন্ধ করা চলতে পারে না।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পরে যখন একটি বহুমত ও বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সক্ষা জেগেছিল, তখন দেখা যাচ্ছে, একটি চক্র দেশের প্রগতিশীল চেতনার প্রতি আঘাত হানতে সচেষ্ট হয়েছে। তারা মাজার-খানকায় হামলা করছে। বাউলগানের আসর, নাটক, যাত্রাপালায় হামলা করে বন্ধ করে দিচ্ছে। এই চক্রই বিভিন্ন অজুহাত তুলে বইমেলা বন্ধ করে দিতে সচেষ্ট হয়েছে। সরকার এই চক্রকে দমন না করে তাদের কথায় সায় দিচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যাঁরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তাঁরাই এখন পতিত ফ্যাসিবাদীদের মতো আচরণ করছেন, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অমর একুশে বইমেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ফেব্রুয়ারি মাসেই বইমেলা করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার দাবি জানান বক্তারা। এ ঘোষণা না দেওয়া হলে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন তাঁরা।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ারের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংহতি সাংস্কৃতিক সংসদের সম্পাদক সিকদার হারুন, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুন নুজহাত, শহীদ আসাদ পরিষদের সদস্য আরিফ খান, প্রগতি লেখক সংঘের লেখক কামাল হোসেন; সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় গণফ্রন্টের আহ্বায়ক রজত হুদা, মাওলানা ভাসানী পরিষদের নেতা বেলাল চৌধুরীসহ অনেকে।
সমাবেশ শেষে সাংস্কৃতিক কর্মী ও লেখকদের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজমের হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। মহাপরিচালক নেতাদের বলেন, ফেব্রুয়ারিতে মেলা করা একাডেমির জন্যও ভালো। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতি এবং প্রকাশকদের অন্য সংগঠনের নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। প্রকাশক, মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেই ডিসেম্বরে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অসম্মতি থাকায় ডিসেম্বরে মেলার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। আবার মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হলে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে মেলা করার সম্ভাবনা খুব কম। প্রকাশকেরা এতে সম্মত নন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে মেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে মহাপরিচালক জানান।