Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুসৈন্যকে ধ্বংস করতে কৃত্রিম মেধায় ভরসা, এআই বাহিনী বানাচ্ছে ভারত!
দেশ-বিদেশের খবর

যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুসৈন্যকে ধ্বংস করতে কৃত্রিম মেধায় ভরসা, এআই বাহিনী বানাচ্ছে ভারত!

৬ অক্টোবর, ২০২৫
6 মিনিট

আনন্দবাজার।। ভারতীয় ফৌজকে অত্যাধুনিক করতে কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তিকে বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম করে ফেলতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ মেনে শুরু হয়েছে কাজ।

আনন্দবাজার।। ভারতীয় ফৌজকে অত্যাধুনিক করতে কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তিকে বাহিনীর সঙ্গে একাত্ম করে ফেলতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে একটি রোডম্যাপ মেনে শুরু হয়েছে কাজ। ২০২৬-’২৭ আর্থিক বছরের মধ্যে যাবতীয় সামরিক অভিযানে এআই ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারতীয় সেনা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে চলা চার দিনের সংঘর্ষে মার খেয়েও ফেরেনি হুঁশ! ক্রমাগত ভারতকে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। অন্য দিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বাহিনীকে সাজাচ্ছে ইসলামাবাদের পরম ‘বন্ধু’ চীনও। এই পরিস্থিতিতে শক্তি বাড়াতে কৃত্রিম মেধাকে (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) আঁকড়ে ধরল নয়াদিল্লির ফৌজ। এই পদক্ষেপ আধুনিক লড়াইয়ে ‘গেম চেঞ্জার’ হতে চলেছে বলে মনে করছেন সাবেক সেনাকর্তারা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি ব্যবহার করে যুদ্ধের ময়দানে সব হিসাব বদলে দিতে বিশেষ একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে ভারতের তিন বাহিনী। এর জন্য মেশিন লার্নিং এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো তথ্যপ্রযুক্তির পাঠ নিচ্ছেন অফিসার ও সৈনিকেরা। ২০২৬-’২৭ আর্থিক বছরের মধ্যে এআইকে সঙ্গে নিয়ে যাবতীয় সামরিক অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ফৌজ। যদিও সরকারি ভাবে এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দেয়নি কেন্দ্র। যুদ্ধক্ষেত্রে কী ভাবে কৃত্রিম মেধাকে ব্যবহার করা হবে, ইতিমধ্যেই তার একটা রূপরেখা পাওয়া গিয়েছে। এর সর্বাধিক ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মানববিহীন উড়–ক্কু যানের। বর্তমানে অত্যাধুনিক সোয়ার্ম ড্রোন তৈরিতে রীতিমতো ঘাম ঝরাচ্ছেন এ দেশের প্রতিরক্ষা বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্ট মানববিহীন যানগুলিতে কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি থাকবে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। ফলে ঘরে ঢুকে শত্রুর উপরে আক্রমণ শানানো থেকে শুরু করে গুপ্তচরবৃত্তি, নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে এই কাজগুলি করতে পারবে সোয়ার্ম ড্রোন। সংঘর্ষের সময়ে শত্রুর উপর ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সোয়ার্ম ড্রোন। কৃত্রিম মেধাপ্রযুক্তি থাকার কারণে নিজে থেকে রাস্তা চিনে নিয়ে আক্রমণ শানাতে পারবে তারা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এর সবচেয়ে ভাল প্রয়োগ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এ বছরের জুনে এআই-চালিত ড্রোন দিয়ে মস্কোর বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় কিভ। এর মাধ্যমে ক্রেমলিনের একাধিক বোমারু বিমান ধ্বংস করে দেয় তারা। সংশ্লিষ্ট অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই হামলায় রুশ বোমারু বিমানের ডানায় আছড়ে পড়ে ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণ ঘটায় ইউক্রেনের ড্রোন। এর জেরে সেগুলি পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়। ড্রোনের পক্ষে বোমারু বিমানের ডানার অংশ চিনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে কৃত্রিম মেধাপ্রযুক্তি থাকার কারণে স্বয়ংক্রিয় ভাবে লক্ষ্যভেদে কোনও অসুবিধা হয়নি তাদের, বলছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। ওই ধরনের ড্রোন এ দেশের বাহিনীর হাতে আগামি অর্থবর্ষের মধ্যে প্রতিরক্ষা গবেষকেরা তুলে দিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বুঝে নিতে সেনা অফিসারেরা পুরোপুরি ভাবে ‘রিয়েল টাইম ডেটা’র উপর নির্ভরশীল। এই মুহূর্তে কোন ফ্রন্টে সৈনিকেরা কী অবস্থায় রয়েছেন, কোথায় শত্রুর শক্তি বেশি আর কোথায় কম, এ সব তথ্যই লিপিবদ্ধ থাকে ‘রিয়েল টাইম ডেটা’য়। গুপ্তচর ড্রোন, উপগ্রহ চিত্র, নজরদারি বিমান, রেডার এবং স্থলজ সেন্সর থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্য পেয়ে থাকেন তাঁরা। সেগুলি বিশ্লেষণ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেনা কমান্ডারদের। এ ক্ষেত্রেও এআই ব্যবহারের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকছে ভারতীয় ফৌজ। সাবেক সেনাকর্তাদের দাবি, সংঘর্ষের সময়ে বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে ক্রমাগত আসতে থাকে বিভিন্ন রকমের তথ্য। এর জেরে অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভুল করে বসেন কমান্ডার পর্যায়ের অফিসারেরা। জীবন দিয়ে এর খেসারত দিতে হয় রণাঙ্গনের সৈনিকদের। সংঘর্ষস্থল থেকে আসা যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণের কাজ এ বার থেকে কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির সাহায্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে ফৌজের। এতে এক দিকে যেমন গোটা ফ্রন্টের ছবিটা চোখের সামনে দেখতে পাবেন সেনা অফিসারেরা, অপর দিকে তেমনই নির্ভুল পদক্ষেপ করতে পারবেন তাঁরা। বাহিনীকে আধুনিক লড়াইয়ের উপযোগী করে তুলতে ‘স্মার্ট ওয়ার রুম’ তৈরি করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এর মাধ্যমে এআই চ্যাটবট, ভয়েস-টু-টেক্সট সিস্টেম এবং ফেসিয়াল রিকগনিশন টুল-সহ বিভিন্ন এআই-চালিত টুল ব্যবহার করতে পারবে ফৌজ। কমান্ড থেকে আসা যে কোনও নির্দেশের সারসংক্ষেপ দ্রুত বুঝে নেওয়া এবং শত্রুর ড্রোন, লড়াকু জেট বা মর্টারের গোলা চিহ্নিত করণেও কৃত্রিম মেধার ব্যবহার করবে ভারতীয় সেনা, খবর সূত্রের। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশের বিমানবাহিনীতে রয়েছে ‘স্টেলথ’ শ্রেণির পঞ্চম প্রজন্মের লড়াকু জেট। অতি শক্তিশালী রেডারের পক্ষেও এগুলিকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। বিশ্লেষকদের দাবি, কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তিকে ফাঁকি দেওয়া ওই যুদ্ধবিমানের পক্ষে বেশ কঠিন। সেই কারণে রেডার স্টেশনের পাশাপাশি এআইকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে ভারতীয় ফৌজ। উল্লেখ্য, যুদ্ধের সময়ে শত্রুর ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রকে ভোঁতা করতে কৃত্রিম মেধাকে যথেচ্ছ ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সমাজমাধ্যমের কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে সংশ্লিষ্ট ভুয়ো তথ্যটি ছড়ানো হচ্ছে, কী ভাবে তথ্য বিকৃতি করা হয়েছে এবং ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্সকে কোনও ভাবে কাজে লাগানো হয়েছে কি না, সংঘর্ষের সময়ে বাহিনীকে চোখের নিমেষে এ সব খুঁজে দেবে এআই। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শত্রুর ড্রোন, রেডার এবং যাবতীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ধ্বংস করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেনা। একসঙ্গে এগুলিকে উড়িয়ে দিতে পারলে অপর পক্ষ যে দিশেহারা হয়ে পড়বে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এর জন্য প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ইলেকট্রনিক সংঘর্ষে বাহিনীকে পটু করে তুলছে নয়াদিল্লি। আর সেখানেও বিপুল ভাবে ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন কৃত্রিম মেধাপ্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ভারতীয় ফৌজ। ওই সময় নিখুঁত নিশানায় পাকিস্তানে জঙ্গিঘাঁটি এবং বায়ুসেনা ছাউনিগুলিতে হামলা চালাতে রিয়েল টাইম তথ্য সংগ্রহ করে বাহিনী। মূলত ড্রোন এবং কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবি দেখে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন সেনা অফিসারেরা। যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণের কাজ এআই করলে তাঁরা যে আরও দ্রুত পদক্ষেপ করতে পারবেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর তাই এআই রোডম্যাপে দু’টি বিষয় রাখার চিন্তাভাবনা করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রথমত, কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ড্রোন তৈরিতে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। দ্বিতীয়ত, ফৌজের জন্য তৈরি করা হচ্ছে একটি এআই পরীক্ষাগার। সেখানেই রাত-দিন চলবে যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণের কাজ। এই কাজে পারদর্শী একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্সও গঠন করছে সরকার। তবে বাহিনীকে এআই-নির্ভর করে তোলার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। প্রথমত, কৃত্রিম মেধাপ্রযুক্তি যাতে কোনও ভাবে হ্যাকিং না নয়, সে দিকে কড়া নজর রাখতে হবে ফৌজকে। এর জন্য প্রয়োজন অতি শক্তিশালী সাইবার সিকিউরিটি কমান্ড। আগামি দিনে এটি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। দ্বিতীয়ত, এআই-চালিত ড্রোনকে ফাঁকি দিতে নানা রকমের পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে শত্রু। কৃত্রিম মেধা সেটা ধরতে না পারলে বিপক্ষের পাতা ফাঁদে গিয়ে পড়বে এ দেশের বাহিনী। আর তাই এ ব্যাপারে সৈনিকদের কঠিন প্রশিক্ষণ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। গোটা বিষয়টিতে অভিযোজিত হতে সময় লাগবে, বলছেন সাবেক সেনাকর্তারা। গত ৩ অক্টোবর রাজস্থানের অনুপগড়ের সেনাছাউনিতে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেন ভারতীয় স্থলসেনার প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। সেখানে তিনি বলেন, ইসলামাবাদ যদি মানচিত্রে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চায়, তা হলে সন্ত্রাসে রাষ্ট্রীয় মদত বন্ধ করুক। এ বার আর আমরা অপারেশন সিঁদুরের প্রথম পর্যায়ের মতো সংযম দেখাব না। আমাদের অভিযান এমন জায়গায় পৌঁছোবে যে পাকিস্তানকে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবতে হবে। এর পর সৈনিকদের জন্য বিশেষ একটি বার্তাও দেন তিনি। ‘সম্ভাব্য সংঘর্ষের’ কথা উল্লেখ করে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ঈশ্বর চাইলে আপনারা দ্রুত সেই সুযোগ পাবেন। এর জন্য তৈরি থাকুন। আপনাদের শুভেচ্ছা জানাই। অন্য দিকে একই দিনে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দেন বায়ুসেনাপ্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিংহ। তিনি বলেন, ইসলামাবাদের বেশ কয়েকটি লড়াকু জেট আমরা ধ্বংস করেছি। এ ছাঢ়া বায়ুসেনা ঘাঁটি ও পরিকাঠামোয় আঘাত হানা গিয়েছে। সেনাপ্রধানের এ-হেন মন্তব্যের পর রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। পরবর্তী সংঘর্ষের জন্য ভারত তৈরি হচ্ছে বলে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা। গত সেপ্টেম্বরে আগামি ১৫ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রকাশ করে কেন্দ্র। সেখানে হাইপারসনিক (শব্দের পাঁচ গুণের চেয়ে গতিশীল) ক্ষেপণাস্ত্র এবং কৃত্রিম মেধা ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে আগামি দিনে পাকিস্তান বা চীনকে নিশানা করতে এআই যে নয়াদিল্লির বড় হাতিয়ার হতে যাচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য।

Share this article

দেশ-বিদেশের খবর

দেশ-বিদেশের খবর বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement