Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে...’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা
বিনোদন

‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে...’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা

২ জুন, ২০২৫
4 মিনিট

ডেস্ক রিপোর্ট।। একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগানো কালজয়ী গানগুলোর অন্যতম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি...’ গানটির সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদ

ডেস্ক রিপোর্ট।। একাত্তরে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগানো কালজয়ী গানগুলোর অন্যতম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি...’ গানটির সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদ সবার কাছে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত। একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) অভিযোগ করেছিলেন এক ব্যক্তি। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার (০২ জুন) কুমিল্লা সার্কিট হাউসে জামুকার শুনানিতে হাজির হয়ে আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর কণ্ঠে প্রচারিত গান যেমন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপ্ত করেছিল, তেমনি নিজেও পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে লড়াই করেছেন বীরদর্পে। আপেল মাহমুদ কুমিল্লার সন্তান। তিনি জেলার মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা। এ জন্য জামুকায় তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগটির বিষয়ে সোমবার কুমিল্লা সার্কিট হাউসে শুনানি হয়। ওই শুনানিতে জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুনসহ সাত সদস্যদের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল। এদিন সকালে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি কার্যক্রমের জন্য আসে প্রতিনিধিদলটি। যার মধ্যে একটি ছিল জেলার বিভিন্ন উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের শুনানি। শুনানি শেষে জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, ৫ আগস্টের পরে কুমিল্লা জেলা থেকে ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন অভিযোগ আসে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে দুটি কমিটিতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আপেল মাহমুদ প্রমাণ করেছেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। আপেল মাহমুদ যদি শুধু গান গেয়ে উদ্বুদ্ধ করার মতো ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকতেন, তাহলেও তিনি সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খেতাব পেতেন; কিন্তু তিনি কাগজপত্রে প্রমাণ করেছেন তিনি সম্মুখযোদ্ধা ছিলেন। তাই তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিশ্চিত। শুনানি শেষে বের হয়ে কুমিল্লা সার্কিট হাউসের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আপেল মাহমুদ। সেখানে তিনি বলেন, আপেল মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা, সেটা আমাকে জীবিত থেকেই দ্বিতীয়বার প্রমাণ করতে হয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা নই দাবি করে যেই অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি ভুল প্রমাণিত হওয়ায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্যরা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আপেল মাহমুদ ও জামুকার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর স্বাধীন বাংলা বেতারকর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন সুরকার ও গায়ক আপেল মাহমুদের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা নন বলে অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের উপপরিচালক (উন্নয়ন) ফাতেমা খাতুন আপেল মাহমুদকে নোটিশ করেন। সেই নোটিশে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা, এর পক্ষে যাবতীয় দলিল ও সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য বলা হয়। আপেল মাহমুদ দ্য লিজেন্ড আপেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে আমি ৩ নম্বর সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধ করেছি, ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের কমান্ডে যুদ্ধ করেছি। ১০ এপ্রিল (১৯৭১) পর্যন্ত আমরা নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করেছি। নরসিংদী থেকে আমরা চলে যাই ক্যাপ্টেন নাসিমের আন্ডারে আশুগঞ্জে। সেখানে আমরা ভৈরব রামনগর ব্রিজে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করি। সেখান থেকে রামনগর ব্রিজ, ভৈরব, আশুগঞ্জ, হবিগঞ্জ, চুনারুঘাট, চানপুর টি স্টেট, তেলিয়াপাড়া টি স্টেটে যুদ্ধ করেছি। তেলিয়াপাড়া ১৯৭১ সালে আমার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। আশুগঞ্জের যুদ্ধের সময় আমার বাঁ চোখের পাশে আঘাতপ্রাপ্তও হয়। পরে তাঁকে আগরতলায় নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে আপেল মাহমুদ আরও বলেন, সেখানে আবদুল জব্বার ভাইও আসেন। ২৫ মে কলকাতায় বড় করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতেই আমাকে এবং জব্বার ভাইকে শরণার্থীদের জন্য একটি অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। আমরা দুই দিন অনুষ্ঠান করে অনেক শিল্পী পাই। ১ জুন থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমার ওপর যে দায়িত্ব ছিল, তা ২০০৬ সালে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার বা রেডিও বাংলাদেশ যা-ই বলেন না কেন, সেই দায়িত্ব পালন করেছি। আমি তো মনোয়ার হোসেনের কোনো ক্ষতি করিনি, জানি না তিনি কেন এমন করলেন। তাঁর ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে বেঁচে থাকা অবস্থায় আমাকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কুমিল্লা সার্কিট হাউসে আপেল মাহমুদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী নাসরিন মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা একুশে পদকপ্রাপ্ত শব্দসৈনিক মনোরঞ্জন ঘোষাল, বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর হায়াত খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সাহাসহ কয়েকজন। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার প্রথম আলোকে বলেন, পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন জামুকার সদস্যরা। আমরা শুধু শুনানির স্থানটি নির্ধারণ করে দিয়েছি। ঢাকা থেকে আসা জামুকার মহাপরিচালকসহ প্রতিনিধিদল শুনানি পরিচালনা করেছে। প্রসঙ্গত, আপেল মাহমুদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গানের গায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর বেশ কিছু গান আজও মানুষের হৃদয়ে রয়েছে। ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে... ’ গানটিও তাঁর একটি বিখ্যাত গান। সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। দেশাত্মবোধক গান ছাড়াও রবীন্দ্রসংগীত, লালনগীতি, গণসঙ্গীত ও আধুনিক ধারার গান গেয়ে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন আপেল মাহমুদ।

Share this article

বিনোদন

বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement