রাজনীতি
'বামরা বাংলাদেশকে বনসাঁই বানিয়ে রাখতে চান'
১৭ মে, ২০২৫
3 মিনিট
'বামরা বাংলাদেশকে বনসাঁই বানিয়ে রাখতে চান'
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে ১৪ মে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যারা বন্দরের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ, পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের দিয়ে এই কাজ করাতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ যদি রাজি না হয়, জোরাজুরি নয়, রাজি করিয়েই করতে হবে। কারণ, এটা এমন এক বিষয়, পুরো জিনিস শুনলে রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
প্রধান উপদেষ্টার এই কথার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও অনেক রাজনৈতিক দল বিদেশিদের বন্দর দেয়ার বিরোধিতা করছেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তারা কর্মসূচিও পালন করেছে। আরও বড় কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তারা।
বাম জোটের শরীক দল সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই অনির্বাচিত সরকারের গণবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ম্যান্ডেট বা অধিকার নেই। করিডোর দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা যেসব উদ্যোগের কথা প্রচার করছে সেগুলো জাতীয় স্বার্থবিরোধী। এগুলোর সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত।
তিনি বলেন, আমরা বাম দলগুলো এরইমধ্যে ওইসব উদ্যোগের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করেছি। আরও কর্মসূচি দেব। তারপরও সরকার যদি বিরত না হয় তাহলে আমরা কক্সবাজার , চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চসহ আরও শক্ত কর্মসূচি দিয়ে প্রতিহত করবো।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এই সরকার অন্তর্বর্তী সরকার। তারা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য এসেছে। ফলে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যাতে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত সেই সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তাদের রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করা উচিত। তারা যে প্রস্তাব বা সিদ্ধান্তের কথা বলছেন সেগুলো কেন বলছেন, কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন, তার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ কী এই বিষয়গুলো তো আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট করতে হবে। এককভাবে তারা তো এগুলো করতে পারেন না।
জোনায়েদ সাকি মনে করেন, এই সরকারের ম্যান্ডেট সংস্কার এবং জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। এটার জন্য একটা জাতীয় ঐক্য আছে।
তিনি বলেন, সরকারের এমন কোনো কাজ করা ঠিক হবে না, তারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না যাতে এই ঐক্যে ফাঁটল ধরে বা বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটা বিরোধ সৃষ্টি হয়।
তবে বাম দলগুলোর এই বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাংলাদেশের যমুনা টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, বামদের দ্বারা ইনফ্লিয়েনস্ড (প্রভাবিত) হলে বাংলাদেশে জব হবে না। বাংলাদেশকে উনারা ডুয়ার্ফ (বামন) বানিয়ে রাখতে চান, বনসাঁই বানিয়ে রাখতে চান। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, এই সরকারের মূল ম্যান্ডেট হলো সংস্কার। প্রত্যেকটা বিষয় সংস্কারের মধ্যে পড়ে। আমরা বন্দরের বিষয়ে যে কাজ করছি এটা বড় রকমের অর্থনৈতিক সংস্কার। এর ফলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা যে মানবিক চ্যানেলের (রাখাইনে মানবিক করিডোর) কথা বলছি সেটাও একটা বড় সংস্কারের অংশ। কারণ আপনি দেখেছেন সাত বছর ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো ধরনের কোনো অগ্রগতি নাই। আমরা এক মিলিয়নের মতো রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে রেখেছি। এটা তো একটি বড় মানবিক ইস্যু। এটার একটা সমাধান খুঁজে বের করা তো বড় রকমের সংস্কার। আমরা তো এটা এড়িয়ে যেতে পারি না।
এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের। ইত্তেফাক-এর সৌজন্যে।