Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
লন্ডনে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীদের আয়ের পথে কঠিন বাধা
দেশ-বিদেশের খবর

লন্ডনে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীদের আয়ের পথে কঠিন বাধা

১৬ আগস্ট, ২০২৫
3 মিনিট

ইত্তেফাক।। লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীরা এখনও উচ্চশিক্ষিত হয়েও ভালো বেতনের চাকরি পেতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

ইত্তেফাক।। লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীরা এখনও উচ্চশিক্ষিত হয়েও ভালো বেতনের চাকরি পেতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় বৈষম্য, কাঠামোগত অসাম্য এবং কর্মক্ষেত্রে অনমনীয়তার কারণে তারা অর্থবহ কর্মসংস্থান থেকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। সম্প্রতি গ্রেটার লন্ডন অথরিটি (জিএলএ) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশি অ্যান্ড পাকিস্তানি উইমেন ইন গুড ওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনলাইন ডন জানিয়েছে, প্রতিবেদনে হতাশাজনক পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। ২০২২ সালে লন্ডনে প্রায় অর্ধেক পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নারী (৪৮.১ শতাংশ) ছিলেন অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয়। একই সময়ে একই পটভূমির পুরুষদের মধ্যে এ হার ছিল মাত্র ১৫.৩ শতাংশ। নারীদের বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ১৬.৯ শতাংশ, যা পুরুষদের তুলনায় তিন গুণ বেশি (৫.৫ শতাংশ)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র হলো লিঙ্গভিত্তিক মজুরি বৈষম্য। লন্ডনে পাকিস্তানি নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কম আয় করেন, যা যেকোনো জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক পার্থক্য। এই তথ্যকে 'চমকপ্রদ' আখ্যা দিয়ে লন্ডনের ডেপুটি মেয়র ফর কমিউনিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল জাস্টিস ড. ডেবি উইকস-বার্নার্ড বলেন, অভিজ্ঞ পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি নারীরা এখনো পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এমনকি সাক্ষাৎকারের সুযোগ পেতে অনেকে নিজেদের নাম পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তার ভাষায়, ‘এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এসব অভিজ্ঞতা যেমন তাদের দৃঢ়তার প্রতিফলন ঘটায়, তেমনি আমাদের দেখায় যে এসব বাধা দ্রুত ভাঙা জরুরি।’ প্রতিবেদনটিতে ৩২ জন নারীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে। তাদের মধ্যে হতাশার সুর স্পষ্ট হলেও, অনেকেই দৃঢ় সংকল্পের কথাও বলেছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সলিসিটর খাদিজা (বয়স ৩০ থেকে ৩৫) বলেন, ‘লিগ্যাল প্র্যাকটিস কোর্স (এলপিসি) করতে এখন ১৪ হাজার পাউন্ড লাগে। আমি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয় করছিলাম। কিন্তু যখন জানালাম আমার বাবা ট্যাক্সি ড্রাইভার, তারা আমাকে অবজ্ঞার চোখে দেখল। অথচ অন্যদের জন্য বিষয়টি সহজ ছিল-তাদের বাবা-মা টাকা দিয়ে দিয়েছেন।’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ ফারজানা জানান, তার এক সহকর্মীকে পদোন্নতি না দিয়ে তা এক শ্বেতাঙ্গ নারীকে দেয়া হয়, যিনি দলের কাজ সামলাতেই পারছিলেন না। অথচ তার সহকর্মীর অভিজ্ঞতা ছিল ১০ বছরের বেশি। পাকিস্তানি শিক্ষিকা আমেনা জানান, সাক্ষাৎকারে তাকে বলা হয় তার উচ্চারণে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হবে এবং 'আমাদের অ্যাকসেন্টের সঙ্গে তা মেলে না। অন্যদিকে, মুসলিম পরিচয়ের কারণে বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে। বাংলাদেশি স্বেচ্ছাসেবী মাহমুদা বলেন, আমরা যখন হিজাব পরি, তখন অনেকেই সন্দেহ করে-এ কি কাজ করতে পারবে? ঠিকমতো কথা বলতেও পারবে তো?' এছাড়া পারিবারিক দায়িত্ব এবং কর্মজীবনের ভারসাম্য রক্ষা করাও বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে সাশ্রয়ী চাইল্ডকেয়ারের অভাব তীব্র সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ কর্মী জায়না বলেন, আমি যদি সন্তানদের ডে কেয়ারে রাখি এবং দীর্ঘ সময় কাজ করি, তবে আমার অধিকাংশ বেতনই সেখানে চলে যাবে। এটি বাস্তবসম্মত নয়। তবে সব প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক নারী দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নীতি-নির্ধারক আনিসা বলেন, আমি শুধুমাত্র একটি বৈচিত্র্য ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে কাজের সুযোগ পেয়েছি। নাহলে আজ আমি এখানে থাকতাম না। প্রতিবেদনটিতে সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্লাইন্ড রিক্রুটমেন্ট, বিদেশি যোগ্যতার স্বীকৃতি, সাশ্রয়ী চাইল্ডকেয়ার এবং বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীদের জন্য বিশেষ পদোন্নতি কর্মসূচি। ড. উইকস-বার্নার্ড বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্য কমানো একসঙ্গে হতে হবে। যেন কোনো সম্প্রদায় পিছিয়ে না থাকে। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ী নেতা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং সিটি হলকে অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্র তৈরির প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে, যা লন্ডনের বহুমাত্রিক বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করবে।

Share this article

দেশ-বিদেশের খবর

দেশ-বিদেশের খবর বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement