দেশ-বিদেশের খবর
‘যন্ত্রণা দিয়ে আনন্দ পান’, নোবেল শান্তির বায়না ধরা ট্রাম্পকে বকলমে ‘বদ্ধ উন্মাদ’ বললেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ
১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
3 মিনিট
ডেস্ক রিপোর্ট।। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন বছর ৮২-র নোবেলজয়ী আমেরিকার অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিটজ।
ডেস্ক রিপোর্ট।। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন বছর ৮২-র নোবেলজয়ী আমেরিকার অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিটজ। শুধু তা-ই নয়, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করছেন বলেও সুর চড়িয়েছেন তিনি।
নোবেল শান্তি পুরস্কার চেয়ে ‘বায়না’ ধরেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পরিস্থিতিতে তাঁর যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিটজ। শুধু তা-ই নয়, একরকম চাঁচাছোলা ভাষায় ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির সমালোচনা করেছেন তিনি। বলেছেন, এতে সাড়ে সাত দশক পিছিয়ে যাবে আমেরিকার অর্থনীতি। পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে শিক্ষা ও গণতন্ত্রের ধ্বংসকারী বলতেও ছাড়েননি স্টিগলিটজ।
সম্প্রতি, ভারত, ব্রাজিল এবং চিনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে মুখ খোলেন বছর ৮২-র নোবেলজয়ী জোসেফ। সেখানে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির সমস্ত তত্ত্বকে দূরে সরিয়ে রেখে বাণিজ্যিক সংঘাতে নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কী করছেন, তা তিনি নিজেও জানেন না। সারা দুনিয়ার কাছে সেটাই সবচেয়ে ঝঞ্ঝাটের। এতে বিপরীত দিকে থাকা সমঝোতাকারীরা বিরক্ত হচ্ছেন এবং ক্রমাগত আমেরিকাবিরোধী পদক্ষেপ করছেন।’
এর পরই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন স্টিগলিটজ। তাঁর কথায়, ‘এই ধরনের সমঝোতাগুলির মূল ভিত্তি হল দর কষাকষি। আপনি কখনওই উল্টো দিকে বসে থাকা দেশটির থেকে সব কিছু পাবেন না। কারণ, তারাও বাণিজ্যচুক্তি থেকে লাভের গুড় খেতে ইচ্ছুক। আমি এ রকম অনেক বিদেশিকে চিনি, যাঁরা সমঝোতা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের সাফ কথা, সম্ভাব্য বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক আচরণ করছে না।’
পাশাপাশি, এই ইস্যুতে বকলমে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ‘বদ্ধ উন্মাদ’ বলে খোঁচা দিয়েছেন নোবেলজয়ী স্টিগলিটজ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘যে কোনও বাণিজ্যচুক্তির নেপথ্যে একটা তত্ত্ব থাকে। কী ভাবে সংশ্লিষ্ট সমঝোতা মেনে দু’টি দেশ এগিয়ে যাবে, তার নীলনকশাও তৈরি হয় সেখানে। কিন্তু ট্রাম্প জমানায় তার কোনও বালাই নেই। একটা আলাদা বিশ্বে রয়েছেন তিনি। নিজের খেয়ালে উদ্ভট কথা বলছেন, উদ্ভট এবং পাগলাটে আচরণ করছেন।’
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়া ইস্তক ভারত, ব্রাজিল এবং চিন-সহ একাধিক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ঘাটতি নিয়ে সরব হন ট্রাম্প। এই ব্যবধান মেটাতে এপ্রিলে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি চালু করেন তিনি। সেখানে বলা হয়, যে দেশ মার্কিন পণ্যে যতটা শুল্ক নেবে, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামগ্রীর উপরে ঠিক ততটাই শুল্ক চাপাবে আমেরিকা। তাঁর এই সিদ্ধান্তকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে উল্লেখ করেছেন স্টিগলিটজ।
গণমাধ্যমের সামনে উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন নোবেলজয়ী জোসেফ। তাঁর যুক্তি, ‘ট্রাম্প বলছেন, যাঁদের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে, তারা নাকি অনৈতিক সুবিধা পাচ্ছে। আর আমরা যে হেতু দুনিয়ার অন্যতম ‘সুপার পাওয়ার’, তাই সকলকে আমাদের থেকে পণ্য কিনতেই হবে। কিন্তু, মনে রাখতে হবে যে এটা ১৯৫০ সাল নয়, ২০২৫। ২১ শতকের আধুনিক পৃথিবীতে এটা সম্ভব নয়।’
স্টিগলিটজের দাবি, মার্কিন অর্থনীতির বড় অংশ পরিষেবাক্ষেত্রের উপরে নির্ভরশীল। তার মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। অন্য দিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) মাত্র ৯ থেকে ১০ শতাংশ আসে ঘরের মাটিতে তৈরি হওয়া পণ্য থেকে। নোবেলজয়ীর প্রশ্ন, ‘এই ক্ষেত্রগুলির উন্নতির জন্য কী করেছেন ট্রাম্প? ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে কেবল ধ্বংসই করে চলেছেন।’
প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের গোড়াতেই খবরের শিরোনামে থেকেছে বেআইনি অনুপ্রবেশ। এটা বন্ধ করতে বিপুল সংখ্যায় অভিযুক্তকে প্রথমে গ্রেফতার এবং পরে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠান তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ধৃতদের সামরিক বিমানে চাপিয়ে তাঁর নিজের দেশে পৌঁছে দেয় আমেরিকার ফৌজ। এই সফরকালে সর্ব ক্ষণ হাতকড়া এবং পায়ে বেড়ি পরিয়ে রাখা হয় তাঁদের। এর থেকে ছাড় পাননি ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ভারতীয়েরাও। যদিও ওয়াশিংটনের ওই পদক্ষেপ নিয়ে দুনিয়া জুড়ে ওঠে নিন্দার ঝড়।