দেশ-বিদেশের খবর
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিযানের পূর্ণ স্বাধীনতা দিলেন মোদি
৩০ এপ্রিল, ২০২৫
2 মিনিট
কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলা ঘিরে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন দুই দেশের নেতারা। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে টানা পাঁচ রাতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে আজ মঙ্গলবার সেখানে ভারতের একটি ‘নজরদারি ড্রোন’ ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল তিন বাহিনীর প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, আজ রাতে ওই বৈঠকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতার ওপর পূর্ণ আস্থা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, ভারতের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার সময়, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ এবং কোন প্রক্রিয়ায় জবাব দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ রয়েছে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে নতুন করে এই উত্তেজনা শুরু হয় ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার পর। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নৃশংস এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লি। হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন তিনজনের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি বলেও দাবি তাদের। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করেছে পাকিস্তান।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে কাশ্মীরের মালিকানা নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে তিনটি যুদ্ধে জড়িয়েছে তারা। এবারও পেহেলগাম হামলার পর উত্তেজনার পারদ চড়েছে, যাতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাশ্মীরে ওই হামলার পর বৃহস্পতিবার থেকে আজ পর্যন্ত টানা পাঁচ রাতে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে ভারতীয় বাহিনী জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি পাকিস্তান।
এরই মধ্যে গতকাল নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয় বলে দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তাঁদের ভাষ্য, ড্রোনটি আকাশসীমা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে। তখন পাকিস্তানি সেনারা সেটি গুলি করে ভূপাতিত করেন।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম পিটিভির খবরে বলা হয়েছে, যথাসময়ে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ভারতের ‘গুপ্তচরচেষ্টাকে’ ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির প্রমাণ। সীমান্তে যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে প্রায় দুই হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি। এ ছাড়া গতকাল থেকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রায় অর্ধেক পর্যটন এলাকায় সাধারণ মানুষকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ভারত সরকারের নথি অনুযায়ী, গতকাল কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বাকিগুলোয় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। কত দিন পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হবে, তা জানানো হয়নি।