Thin-Left
Thin-Right

Advertisement

Top Advertisement
ট্রাম্পের সঙ্গে কোন বিরোধের কারণে প্রশাসন থেকে সরে গেলেন ইলন মাস্ক
দেশ-বিদেশের খবর

ট্রাম্পের সঙ্গে কোন বিরোধের কারণে প্রশাসন থেকে সরে গেলেন ইলন মাস্ক

৩১ মে, ২০২৫
6 মিনিট

ডেস্ক রিপোর্ট।। আল জাজিরাবৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

ডেস্ক রিপোর্ট।। আল জাজিরাবৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই বিভাগে তাঁর দায়িত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানো। বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে তার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে ছিল। মাস্কের এ প্রস্থান এমন এক সময়ে ঘটল, যখন কি না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম বড় ধরনের মতবিরোধের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচিত কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিল নিয়ে এ মতবিরোধ তৈরি হয়। এ বিলটি গত ২২ মে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সময়কাল শেষ হওয়ার পথে। স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক লিখেছেন, অপ্রয়োজনীয় সরকারি খরচ কমানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। মাস্ককে সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে মাস্ক নানা কর্মকান্ডের কারণে বেশ বিতর্কিত হয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশে সহায়তা পাঠানোর কাজে নিবেদিত মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে। মাস্ক সরকারি দক্ষতা বিভাগে কত দিন ছিলেন ট্রাম্প প্রশাসনে ‘বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা’ হিসেবে মাস্ক সীমিত সময়ের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী, তাঁকে ৩৬৫ দিন সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩০ দিন কাজ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আশায় সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলা হয়। মাস্কের মেয়াদ মোটামুটি চার মাসের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়েছে। আইনত নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। এপ্রিলের শেষ দিকে মাস্ক ঘোষণা করেন, তিনি শিগগিরই আবার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে মনোযোগ দেবেন এবং মে মাস থেকে সরকারি দক্ষতা বিভাগের সময় দেওয়া কমিয়ে ফেলবেন। অবশ্য মাস্ক এটাও বলেছিলেন, যত দিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন এবং যত দিন প্রয়োজন হবে, আমি প্রতি সপ্তাহে এক-দুদিন সরকারি কাজের জন্য সময় দেব। মাস্ক কেন ট্রাম্পের কর ও বাজেট বিলের বিরোধিতা করছেন সিবিএস-এর সানডে মর্নিং অনুষ্ঠানে ইলন মাস্কের দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ গত মঙ্গলবার প্রকাশ হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, তিনি এত বড় ব্যয় বিল দেখে হতাশ হয়েছেন। মাস্ক আরও বলেছেন, ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এ বিলটি বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরকারি খরচ কমানোর চেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল করেছে। মাস্ক বলেন, আমার মনে হয়, একটা বিল বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু দুটি জিনিস একসঙ্গে হতে পারে কি না, তা আমার জানা নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বিলটির পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, এ বিল নিয়ে আমরা আলোচনা করে যাব। এর কিছু নির্দিষ্ট দিক নিয়ে আমি খুশি নই, তবে কিছু দিক নিয়ে আমি পুলকিত। ব্যাপারটা এমনই চলে। এক হাজারের বেশি পৃষ্ঠার বাজেট বিলটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নীতিমালার লক্ষ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিলে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চালু হওয়া কর ছাড়ের মেয়াদ আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রস্তাবিত কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারে তহবিল বৃদ্ধির কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কর ও বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধই ছিল হোয়াইট হাউসে মাস্কের সময়কালের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। মাস্ক আর কী কী বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছেন হোয়াইট হাউসে থাকার সময় ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন মাস্ক। বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রধান বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে তিনি একবার ‘মূর্খ’ বলেছিলেন। ট্রাম্প বিশ্বের নানা দেশের ওপর ব্যাপক হারে বাণিজ্য শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মাস্ক নাভারোকে নিয়ে আক্রমণাত্মক হন। মাস্ক প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি মুক্ত বাণিজ্য এবং কম শুল্ক ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থিতিশীল শুল্ক কাঠামোর পক্ষে। গত এপ্রিলে মাস্ক আশা প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে এক সময় ‘শূন্য শুল্কের’ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তবে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে আমদানি করা ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে। দক্ষতা বিভাগের ভবিষ্যৎ কী চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সরকারি দক্ষতা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ইলন মাস্ক পদত্যাগ করার পর এখন পর্যন্ত তাঁর জায়গায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে এ সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মাস্ককে সরকারি খরচ কমানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল-সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমানো, চুক্তি বাতিল করা এবং কিছু সংস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া। ফেব্রুয়ারিতে মাস্ক ও ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁরা সরকারের বৈচিত্র্য ও জলবায়ুপ্রকল্প সংক্রান্ত কোটি কোটি ডলারের জালিয়াতি উন্মোচন করেছেন। তবে পরে দেখা যায়, এসব দাবির বেশির ভাগই মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর ছিল। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘সময় যত যাবে, সরকারি দক্ষতা বিভাগের কার্যক্রম ততই শক্তিশালী হবে। আর এটা সরকারি ব্যবস্থার স্বাভাবিক অংশ হয়ে উঠবে।’ তবে ক্যালিফোর্নিয়ার পেপারডাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক কোলিন গ্র্যাফি মনে করেন, সরকারি দক্ষতা বিভাগের ভবিষ্যৎ এখন খুব অনিশ্চিত। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, সরকারি দক্ষতা বিভাগের শক্তির যে জায়গাটি ছিল তা হলো-বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ট্রাম্পের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। দক্ষতা বিভাগকে হয়তো কিছু সময় সংগ্রাম করতে হবে, কিন্তু মাস্ক না থাকায় এবং সংস্থার বিরুদ্ধে চলমান মামলার কারণে এটি বেশি দিন টিকতে পারবে না। এখন এই সংস্থার দায়িত্ব নেওয়াটা কারও জন্যই সুখকর হবে না, বরং বিপদের হবে। ট্রাম্পের কর ছাড়গুলো এত বেশি যে খরচ কমানোর চেষ্টা দিয়ে সেগুলো সামাল দেওয়া যাবে না। মাস্ক কি মনে রাখার মতো কিছু করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের দায়িত্বকাল বেশ বিতর্কিত ছিল। তিনি সরকারি কর্মীর সংখ্যা অনেক কমিয়েছেন এবং কয়েকটি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কর্মসূচি বাতিল করেছেন-যা ব্যাপক সমালোচনার কারণ হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক কূটনীতিক কোলিন গ্র্যাফি বলেন, ইলন মাস্কের সরকারি দক্ষতা বিভাগ এমন ছিল, যেন তাঁর একটি রকেট উৎক্ষেপণের পর পরই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে এবং দেখিয়ে দিয়েছে যে, এটা কাজের না। গ্র্যাফি আরও বলেন, তবে একটা ব্যাপারে পার্থক্য আছে-একটির অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় অর্থের বিনিময়ে, আর অন্যটির অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় মানুষের জীবনের বিনিময়ে। ট্রাম্প ও মাস্কের বিরুদ্ধে সমালোচনা হওয়ার একটি মূল জায়গা হলো, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি-এর কাজ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়গুলো কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১ হাজার ৬০০ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয় এবং প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়। ওই সময় বাকি কর্মচারীদের নিজেদের জিনিসপত্র সংগ্রহ করে কার্যালয় ছাড়ার জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইউএসএআইডির ব্যবস্থাপনায় হওয়া চুক্তিগুলোর ৮৩ শতাংশই বাতিল করা হয়েছে। এরপর মার্চে মেরিল্যান্ডের এক ফেডারেল বিচারক বলেন, ইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারি দক্ষতা বিভাগ যে চেষ্টা চালিয়েছে, তা ‘সংবিধানের লঙ্ঘন’ বলে বিবেচিত হতে পারে। তিনি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এর আওতায় সরকারি দক্ষতা বিভাগকে ইউএসএআইডি-সংশ্লিষ্ট কর্মী ছাঁটাই, অফিস বন্ধ, চুক্তি বাতিল বা নথিপত্র ধ্বংসের মতো কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা পাবলিক সিটিজেনের কো-প্রেসিডেন্ট লিসা গিলবার্ট সরকারি দক্ষতা বিভাগকে ‘ধ্বংসের মূলমন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন। আল-জাজিরাকে গিলবার্ট বলেন, ইলন মাস্কের পদক্ষেপের কারণে অনেক সরকারি কর্মচারী চাকরি হারিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটেছে, বিজ্ঞানীরা তহবিল হারিয়েছেন এবং মার্কিন নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণœ হয়েছে। সবকিছুই করা হয়েছে দুর্নীতিগ্রস্ত ধনকুবের ও প্রযুক্তি-উদ্যোক্তার বিশেষ স্বার্থ রক্ষার জন্য। গিলবার্ট আরও বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এই ধ্বংসযজ্ঞ আরও ভয়াবহ। কারণ মাস্কের ‘ধ্বংসাত্মক’ কর্মসূচি উন্নয়নশীল দেশের লাখ লাখ মানুষকে অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক মৃত্যুর দিকে নিয়ে যেতে পারে। লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক চাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ম্যাক্স ইয়োয়েলি বলেন, মাস্কের এ সংক্ষিপ্ত মেয়াদকাল যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে বদলে দিয়েছে। ম্যাক্স আরও বলেন, সরকারি দক্ষতা বিভাগ যেভাবে রাষ্ট্রের কার্যক্ষমতা দুর্বল করেছে এবং মার্কিন গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ ও স্থিতিশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যদিও আদালতে এখনো এসবের আইনি জটিলতা নিয়ে বিচার চলছে।

Share this article

দেশ-বিদেশের খবর

দেশ-বিদেশের খবর বিভাগের সর্বশেষ খবর এবং আপডেট পেতে এই বিভাগে নিয়মিত ভিজিট করুন।

Advertisement

Sidebar Advertisement