প্রযুক্তি
বাংলাদেশে স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু কবে?
৬ এপ্রিল, ২০২৫
3 মিনিট
বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যে ৯ এপ্রিল পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংক সেবা চালু করা হবে।
দেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে চালুর ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ ধাপে থাকার তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রোববার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শেষ ধাপে এসে এখন শুধু নন–জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) লাইসেন্স পেলেই পুরোদমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবে স্টারলিংক। ওই লাইসেন্সের জন্য রোববারই তাদের আবেদন করার কথা।
“পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে এনজিএসও লাইসেন্স নেওয়া, ওটার জন্য সম্ভবত আজকে আবেদন করবেন। আমরা চেষ্টা করব, আমাদের নিয়ম-নীতি মেনে আবেদন করলে যত দ্রুত সম্ভব লাইসেন্সটা দিয়ে দেওয়ার। দেওয়ার পরে বাণিজ্যিক পরিচালনায় তার পরের দিনই উনারা যেতে পারেন।”
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মধ্যে ফোনালাপ হয়। সেই আলোচনার সূত্রে বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে।
এরপর গেল ৯ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বাংলাদেশে ‘গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন’ স্থাপনের ব্যাপারে স্টারলিংকের হয়ে কয়েকটি স্থানীয় কোম্পানি কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ভূমি বরাদ্দ, নির্মাণ সহায়তা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের মত কার্যক্রম পরিচালনায় স্টারলিংকের সঙ্গে কয়েকটি সহযোগিতা চুক্তি করেছে সরকার। স্টারলিংক টিম এই কাজের জন্য কিছু নির্দিষ্ট স্থানও চিহ্নিত করেছে।
এর মধ্যে বিডা চেয়ারম্যান আশিক জানিয়েছেন, বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ৯ এপ্রিল সম্মেলনের ভেন্যু হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের সেবা চালু হবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর নির্দেশ দেন।
ওইদিন তার কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে স্টারলিংক তার বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবাদানের সময় এনজিএসও নীতিমালা মেনে স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে বা আইআইজি ব্যবহার করবে।
বিডা চেয়ারম্যান সোমবারের ব্রিফিংয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের শুরুর পাশাপাশি স্টারলিংকের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, “স্টারলিংকের অনুমোদনের ব্যাপারে… উনারা রেজিস্ট্রেশনের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলেন, আপনারা জেনেছেন, গত ২৯ মার্চ এনজিএসও চালু করে দিয়েছি। তারপরে উনারা বিডা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন, উনাদের বিডা নিবন্ধন হয়ে গেছে।
চৌধুরী আশিক বলেন, “আমাদের দিক থেকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিটা ছিল, আমরা ৯০ দিনের মধ্যে উনাদেরকে ব্যবসা করার ব্যবস্থাটা করে দেব, এনজিএসও লাইসেন্সটা হয়ে গেলে, সেটা হয়ে যাবে।
“এরপর ডিভাইসগুলো আনতে হয়ত উনাদের কিছু সময় লাগতে পারে বা এখানে উনারা কি মডেলে অপারেট করবেন, সেসব ব্যাপারে উনারা কিছু সিদ্ধান্ত নেবেন।”
বিনিয়োগ সম্মেলনের মধ্যে ৯ তারিখ স্টারলিংক সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালুর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা সামাজিক মাধ্যমে যেটা দেখবেন, সেটা স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হবে। যারা সামিটে যাবেন, তারাও ব্যক্তিগত ডিভাইসে যুক্ত করে অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।”
বিনিয়োগ সম্মেলনে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা, মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের আসার বিষয়ে এক প্রশ্নে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “ইলন মাস্ক সম্মেলনে আসবেন, এ রকম কোনো ঘোষণা দিইনি আসলে। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের পরে উনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে গেছেন।
“এখন উনাকে বাংলাদেশে আনার জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আগে একজন ব্যবসায়ীকে আনার ব্যাপারটা যত সহজ ছিল, কোনোভাবে যোগাযোগ করে নিয়ে আসা; এখন আসলে সেটা রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম হবে। সে কারণে উনাকে এত সহজে আমরা আনার কথা চিন্তা করছি না।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সৃষ্ট সংস্থা ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সির (ডিওজিই) প্রধান বানিয়েছেন তার নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখা বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ককে। তবে প্রাথমিকভাবে ১৩০ দিনের মেয়াদ শেষে তিনি ওই পদ থেকে সরে দাঁড়াতে যাচ্ছেন বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি টেনে নিরাপত্তা বিষয়ে করা এক প্রশ্নে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ইন্টারেনেট ব্যবহারের সুযোগ সবার অধিকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম হোক, কুড়িগ্রাম হোক, একটা স্কুলের বাচ্চা হোক, সবার জন্য এই সুযোগটা করে দেওয়া উচিত।
“এটা সবার জন্য ওপেন করে দিতে চাই, ঠিক যেভাবে আমরা সবাই পানি খাই, সবাই শ্বাস নিতে পারি, সে রকম। সেই পারপাসটার উপর ভিত্তি করে এনজিএসও নীতি প্রণয়ন করেছি।”