জাতীয়
সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই: জামায়াত আমির
১০ জুন, ২০২৫
3 মিনিট
ইত্তেফাক ।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের দেয়াল থাকবে না।
ইত্তেফাক ।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদের দেয়াল থাকবে না। আমরা এ দেশেই জন্মগ্রহণ করেছি, জন্মসূত্রে আমরা দেশের মর্যাদাবান নাগরিক। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান এই চার ধর্মের অনুসারীদের মিলেই আমাদের এই বাংলাদেশ। সকল ধর্মের মানুষ নিয়ে মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
সোমবার (৯ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সকল ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ৫ আগস্টের পর আমাদের কী হবে। আমাদেরকে আপনারা পাননি, পাঁচ আগস্টের পরে বাবা, মা এবং স্ত্রী-সন্তানরাও আমাকে পায়নি। এটা আমি আমার কথা বলছি না, আমাদের কথা বলতেছি। আমাদেরকে স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে দেওয়া হয়নি। আমি চোর, ডাকাত, দখলদার ও চাঁদাবাজ নই, আমি খুনি কিংবা সন্ত্রাসীও নই। আমাকে কেন কয়েকবার জেলে রাখা হলো। এটা শুধু আমার ব্যাপারে না এই ধরনের ঘটনা লক্ষ লক্ষ মানুষেরও রয়েছে। আমাদেরকে সমাজের মানুষের সুখ, দুঃখ, ব্যথা, বেদনার অংশীদার হতে দেওয়া হয়নি। তারপরও যেখানে খবর পেয়েছি সারা বাংলাদেশে দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।
জামায়াত আমির বলেন, কিছুদিন আগে বরগুনায় পঞ্চম শ্রেণির একটি মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছে। মেয়েটির বাবা থানায় মামলা করেছিলেন। কেন মামলা করলো শুধু এ কারণেই মেয়েটির বাবাকে খুন করলো লম্পটরা। আপনাদের সম্প্রদায়ের একজন অতি সাধারণ মানুষ। মোরগ বিক্রির দোকানে তিনি চাকরি করতেন, এই দিয়ে তার ছোট্ট সংসারটি চলতো। তিনটা মেয়ের মধ্যে এই মেয়েটি বড়, এরপরের দুইটা এর চেয়েও ছোট। কোলের শিশুটির বয়স আড়াই মাস। আমি সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনাদের পাশে কে কে দাঁড়িয়েছেন। তারা বললেন, ডিসি সাহেব মানুষ পাঠিয়েছেন। ১০ হাজার টাকা আমাদেরকে দিয়ে গেছেন। বলেছিলাম, আর কিছু কি তারা বলেছে ? তিনি বললেন, মামলাটা চলবে তারা দেখবেন এটা। আমি জিজ্ঞেস করলাম এখন আপনারা চলবেন কীভাবে। তিনি বললেন, যিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র অভিভাবক তিনি মারা গেছেন। এই পরিবারের এখন আর কোনও পুরুষ সদস্য নেই। তাঁর স্ত্রী বিধবা আর তিনটা এতিম মেয়ে। মহিলাটি তখন কেঁদে কেঁদে প্রায় বেহুশ হওয়ার উপক্রম। তিনি হাউমাউ করে বললেন, আমরা বাঁচবো কী করে, কি খাবো ? কে আমাদেরকে খাবার দেবে ? আমাদের সংসারের একমাত্র বাতি সে তো নিভেই গেলো। আমি তখন আড়াই মাসের বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বলেছিলাম, এই বাচ্চার দায়দায়িত্ব আমি নিলাম। আমাদের সংগঠন আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রতি মাসে তার আর্থিক ভরণপোষণ দিয়ে যাচ্ছি।
বড়লেখা উপজেলা জামায়াতের আমির এমাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আব্দুল বাছিতের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী, মৌলভীবাজার-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ঢাকার পল্টন থানা আমির শাহিন আহমদ খান, উপজেলা নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ আল মাফুজ সুমন, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল মুহাইমিন, মো. কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বড়লেখা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রণজিত কুমার পাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী, গীতেশ চন্দ্র দাস, কোষাধ্যক্ষ মুক্তাসান বিশ্বাস ও হ্যাডম্যান কেমেডি সুমের।