করোনা শনাক্তে নতুন রেকর্ড, দায়ী ডেল্টা ধরন

9

ডেস্ক রিপোর্ট।। বাংলাদেশে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্তের নতুন রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ১১ হাজার ৫২৫ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সোয়া এক বছর ধরে চলমান এই মহামারিতে মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো একদিনে শনাক্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে আরও ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

মঙ্গলবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। আগের দিন সোমবার ৯ হাজার ৯৬৪ জনের সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয়। এ দিন মৃত্যু ছিল ১৬৪ জনের। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪০৬। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ৩৯২ জনের। ৩০ জুন থেকে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা একশোর ওপরে।

বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতির গভীরতা বোঝা যায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তথ্য থেকে। আইইডিসিআর বলছে, দেশে গত মাসে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের দেহে ভারতে শনাক্ত হওয়া ‘ডেল্টা’ ধরন পাওয়া গেছে। ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভেরিয়েন্টের (ধরন) সর্বশেষ তথ্য’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে আইইডিসিআর বলেছে, এখন দেশে করোনার এই ধরনের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ডেল্টা ধরন শনাক্ত হওয়ার পর এর হার বাড়তে শুরু করে। মে মাসে এ ধরন ৪৫ শতাংশ এবং জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনা শনাক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এ পর্যন্ত যেসব ভেরিয়েন্ট বা ধরন শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ভারতে শনাক্ত ডেল্টা ভেরিয়েন্টটি সবচেয়ে দ্রুত ছড়ায়।

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ শুরু হয় ১ জুলাই, চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত।

ভারতে মে মাসে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল তুঙ্গে। সে সময় দৈনিক সংক্রমণ ছিল চার লাখের বেশি। এই সংক্রমণ এখন কমতে শুরু করেছে। ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ হাজার ৭০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৫৫৩ জন। সেখানে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছিল ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। ভারতে এখন সংক্রমণ কমে এলেও এশিয়ার অন্য দেশগুলোয় এই ভেরিয়েন্টের প্রভাবে সংক্রমণ বাড়ছে।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ছাড়াও যে কয়েকটি প্রতিবেশি দেশে এই ভেরিয়েন্ট ছড়িয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি তিন দেশে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। এই তিন দেশের মধ্যে সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল নেপালে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। ডেল্টার প্রভাবে ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়ছে। সেখানকার হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট প্রকট হয়েছে। ভারতের পার্শ্ববর্তী আরেক দেশ আফগানিস্তানে সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে গত জুনে। সরকার বলছে, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে ৬০ শতাংশ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের জন্য দায়ী ডেল্টা ভেরিয়েন্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ভেরিয়েন্টের কারণে  থাইল্যান্ড ও মঙ্গোলিয়ায়ও সংক্রমণ বাড়ছে।